আমরা অনেকেই সামাজিক উদ্ভাবন বা সোশাল ইনোভেশন বলতে সমাজের যুগান্তকারী পরিবর্তনগুলোকে বুঝি।
অথচ উদ্ভাবনের প্রথম শর্তই হল যেকোন বিষয়কে সহজভাবে চিন্তা করা। বলা হয় উদ্ভাবনের সবচেয়ে বড় নিয়ামক হল সেই দৃষ্টি যা চোখের সামনে বিরাজমান খুবই সাধারণ গদবাধা সব উপকরন থেকেই নিত্য সমস্যার সমাধান বের করে আনতে পারে।
একটি বিষয় বিশেষভাবে বোঝা জরুরী যে কোন আইডিয়াই স্বতন্ত্র নয়, প্রতিটি সৃজনশীল কৌশল ছোট ছোট বিভিন্ন আইডিয়া কিংবা পরামর্শ এবং দৃষ্টিভঙ্গী থেকে অনুপ্রাণিত হয়। একজন সামাজিক উদ্ভাবক সমস্যা যাচাই করা থেকে শুরু করে সমস্যা সমাধানে মনস্থির করা পর্যন্ত পুরো সময়টাতে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয়। সেটা হতে পারে তার সহকর্মী কিংবা বন্ধুমহল, তার পরিবার, প্রতিষ্ঠান কিংবা পড়াশোনা।
আমরা আইডিয়া বলতে আসলে পুরো প্রক্রিয়াটার একেবারে শেষ ধাপটাকে বুঝি, অথচ এই ‘ফিনিশড প্রোডাক্ট’ এর পেছনের বিভিন্ন স্তরে স্তরে ছোট ছোট যে অসংখ্য ধাপ থাকে, সেই বিষয়ে আমাদের অনেকেরই জানা হয়ে ওঠেনা।
পৃথিবীব্যাপী যত সোশাল ইনোভেশন ল্যাব কাজ করছে, তারা প্রত্যেকেই একই প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেঃ “সামাজিক উদ্ভাবন কি ল্যাবে বসে করা সম্ভব?”
এর উত্তরটা খুবই সহজ। না, সামাজিক উদ্ভাবন রসায়নের কোন এক্সপেরিমেন্ট নয় যে ল্যাবে বসে টেস্টটিউবে নাড়াচাড়া করলেই হয়ে যাবে। তবে উদ্ভাবনের পেছনে যে তিনটি মূল বিষয় কাজ করেঃ ১. আগ্রহ ২. অনুপ্রেরণা এবং ৩. ফলিত জ্ঞান; এর নিয়মিত চর্চা এবং গঠনমুলক প্রয়োগ কেবল তখনই সম্ভব, যখন এর সঠিক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা যাবে।
আমাদের আগ্রহ অনেক বিষয়েই থাকতে পারে, সেই আগ্রহ থেকে বিষয়টি নিয়ে কিছু করবার অনুপ্রেরণা তৈরি হয় যখন আমরা আমাদের মধ্যে সেই সম্ভাবনা বা প্রতিভাটি খুব ছোট্ট করে হলেও দেখতে পাই। এরপরে, ফলিত জ্ঞান আমাদের জানায় যে সেই একই ধরনের সমস্যা সমাধানে অন্যরা কি পদক্ষেপ নিয়েছে, কোনটা সফল হয়েছে, কেন হয়েছে, যেটা হয়নি কেন হয় নি, ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমরা বলি ব্র্যাক এর ডিএনএর একটি অনিবার্য অংশ হল উদ্ভাবন। অর্থাৎ আপনি যদি স্বল্প সময়ের জন্যও ব্র্যাক এর সাথে যুক্ত থেকে থাকেন, তবে আপনার মধ্যে উদ্ভাবনী মনন রয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ছাড়াও ব্র্যাক এ সামাজিক উদ্ভাবন সম্ভব। কিন্তু সেই উদ্ভাবন তাহলে ব্র্যাক এর সম্ভাবনার একটি ক্ষুদ্র অংশকেই কেবল প্রতিফলিত করতে পারবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সঠিক জ্ঞান, অনুপ্রেরণা আর ছোট্ট ছোট্ট উদ্যোগের অভাবে অনেক উদ্ভাবনী প্রতিভারই সদ্ব্যবহার করতে আমরা ব্যর্থ হবে।
যেকোন সামাজিক সমস্যা নিয়ে কারও আগ্রহ থেকে থাকলে, সেই আগ্রহকে পুঁজি করে কিছু প্রভাবকের ব্যবস্থা করেই উদ্ভাবনী চর্চার একটা সংস্কৃতি তৈরি করা যায়।এই সংস্কৃতিই বিচ্ছিন্ন উদ্ভাবন থেকে উদ্ভাবনী বিপ্লবের জন্ম দেয়, যার জলজ্যান্ত উদাহরণ হিসেবে বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গুগল, ফেসবুক, অ্যাপেল এর মত সংগঠনগুলো।
এবং এই বিপ্লবের গর্বিত ধারক হিসেবেই একদিন দাঁড়াবে ব্র্যাক।