সামাজিক উদ্ভাবনে একজন ব্র্যাককর্মী হিসেবে আমার কি ভুমিকা?

“উদ্ভাবন সেই পরিবর্তন যা একটি সংগঠনের কার্যকরী ক্ষমতায় নতুন মাত্রা এনে দেয়”- পিটার ড্রাকার

পিটার ড্রাকারকে আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক বলা হয়। বড় বড় কর্পোরেশনের সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রথম যারা প্রশ্ন তুলেছেন তাদের মধ্যে ড্রাকার অন্যতম। তিনি সামাজিক উদ্ভাবনী মানসিকতা তৈরিতে লাভজনক এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকায় বারবার জোর দিয়েছেন।

ব্র্যাক চলতি বছরও লাভ করেছে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ এনজিও হবার গৌরব। পরপর দুবছরের এই সাফল্য একটি বিষয়ই আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সংগঠন হিসেবে ব্র্যাক তার উদ্ভাবনী মুল্যবোধ বাস্তবায়নে বিরামহীনভাবে সফল। আমরা সংগঠন হিসেবে নতুন মাত্রা তৈরিই করিনি, নিজেদের তৈরি করা মাত্রাকে চ্যালেঞ্জ করেছি নিজেরাই।

ড্রাকার উদ্ভাবনকে দেখেছেন খুবই সাবলীলভাবে। উদ্ভাবন কেবল সমাজের খুব বড় বড় আলোচিত সমস্যা সমাধান করবে এমন নয়, আবার খুব বৈপ্লবিক কোন সমাধান না হলে তাকে সামাজিক উদ্ভাবনের কাতারে ফেলা যাবে নয়া এমনটিও নয়। “সফল, সংগঠিত এবং নিয়মানুগ উদ্ভাবন শুরু হয় সমস্যা সমাধানের সহজ উপায় অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে।”

ড্রাকার মনে করেন সামাজিক উদ্ভাবন যদি একাধিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে তবে তা সংশয়ের সৃষ্টি করতে পারে। “সফল উদ্ভাবন অবশ্যই একটি সমস্যায় মনোনিবেশ করবে। সমাধান হবে এতটাই সাধারণ এবং সহজলভ্য যে অন্যরা মনে করবে “এটা আমার মাথায় কি করে এলো না?”। তবে সফল উদ্ভাবনের শুরু হবে খুবই ছোট পরিসরে”

সামাজিক উদ্ভাবনকে ব্র্যাকের ভেতরেও আমরা অনেকেই অনেক জটিল করে দেখি। মনে করি এটা এতটাই প্রাকৃতিক একটা বিষয় যে একে সংগঠিত কোন চর্চায় পরিণত করাটা বৃথা চেষ্টা। মনে করি এই সামাজিক উদ্ভাবন মানেই বিশাল কোন আইডিয়া যা আমাদের মত সাধারণ উন্নয়ন কর্মীর মাথায় কখনই আসবেনা। এসব বোধহয় আইনস্টাইন আর স্টিভ জবসের কাজ।

এক মুঠ গুড়, এক সের পানি আর এক চিমটি লবণের বিপ্লব এক দিনে আসেনি। শুনেছি এই প্রজেক্ট চলাকালীন অনেক মাঠকর্মীই এর উদ্ভাবনী ক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। ডায়রিয়ার অভিশাপ এর মুক্তি তাদের ঘরেই ছিল, এটা তারা মানতে পারেননি। এরপর চলল তাদের বিশ্বাস তৈরির চ্যালেঞ্জ। ডেকে ডেকে তাদের যখন প্রশিক্ষণ দেয়া হল, এবং যার যার পরিবারে এই বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখবার কথা বলা হল, ধিরে ধিরে তারা নিজেরাই দেখতে পেলেন। এবং এভাবেই ব্র্যাক এর মাঠকর্মীরা ব্র্যাকের উদ্ভাবন কর্মীতে পরিবর্তিত হলেন।

পরিবর্তন চলমান একটি বিষয়, উদ্ভাবনও তাই। উদ্ভাবন প্রক্রিয়ার কোন এক বিন্দুতে যেটাকে অর্থহীন নাড়াচাড়া মনে হতে পারে, আবার ঠিক পরবর্তী বিন্দুতেই সেটি পৃথিবী বদলে দেবার ক্ষমতা রাখে। তাই কোন উদ্ভাবনই ছোট নয়, অহেতুক নয়। প্রতিটি ছোট উদ্ভাবন এক একটি ব্র্যাক বিপ্লবের আরেকটি ধাপ মাত্র; যেই ধাপে আপনার-আমার, আমাদের সকলেরই পদচারণা সম্ভব এবং বিপুলভাবে কাম্য।

 

 

We’ll send you a weekly dose of inspiration.
Just about the right amount, not more.

Scroll Down and Subscribe!

Masrura Oishi is an over-thinker and procaffeinator. In her free time, she pretends to be a philosopher and does some development work for BRAC Social Innovation Lab. She invests her insulin pumped energy into reading, writing, traveling and living!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *